Ticker

5/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

Responsive Advertisement

প্রতিটা জিনিসের যত্ন নিতে নিতে আপনি দেখবেন...

 ঘটনা হইল, আপা, এখন আমি কি করব?

আমরা কি করি? আমাদের সকালে ঘুম ভাংতে ভাংতে বেলা কমাস কম দশটা, চোখটা না খুলেই অন্ধের মত হাতড়ে ফোন টা ধরি, ফোন আনলক করেই আমরা চোখটা খুলি, সাইমুলট্যানাসলি! এরপর আমরা সরাসরি চলে যাই ব্রাঞ্চে, ঘড়ির কাটার হিসেবে তখন না হলেও দুটো বাজে, পেটভরে ভাত খাবার আলস্য নেমে আসে পুরো শরীর জুড়ে! বিকেলের দিকে আমরা প্রেমিকা সহ হাটতে বেরুই, খাই, লদকা লদকি করতে করতে সন্ধ্যা পার হয়ে যায়, রাতে বাসায় এসে আমরা ভাবি পড়াশুনা লাগে কাল থেকে শুরু করব, আপাতত রাজা উজির মারি ফেসবুকে, অথবা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অতিরিক্ত জনসং্খ্যার দরুণ মুফতে পাওয়া এসিস্টেন্ট প্রেমিকাদের নিয়ে বিষন্নতার দু:খ বিলাস করি, হতাশার নেশায় বুঁদ হয়ে পড়ি, আবুল হাসানের কবিতার মত, আমি লাস্ট বেঞ্চি, আমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না...
এখন কি করা যায়? অথবা হেডলাইনের মত, আপা, এখন আমি কি করব? হতে পারেন আপনি করোনা উপলক্ষে ভার্সিটি বন্ধ বেকার অথবা আমার মত ডাক্তার, যে কিনা পোস্ট গ্রাডের প্রিপারেশন নেবার জন্য, চাকুরী থেকে ছুটি নিয়েছেন! হতাশার আমল নামা দুজনের ই পাল্লা দেয়া সমান! আপনাদের রাত তিনটে না বাজলে ঘুম আসে না, অনেকের ঘুমের আগে স্বমেহনের ক্লান্তি প্রয়োজন হয়, কি হবে জীবনে, মেয়েটাকে পাব কিনা, ক্যারিয়ারের কি করলাম নানান সমস্যা... আমাদের শিক্ষিত সমাজের ডিপ্রেশনের পাল্লা বেশ ভারী!
প্রথমত আপনি যেটা করতে পারেন, একটু রুটিনড, একটু ডিসিপ্লিনড হন, কেউ বলেনি মিলিটারি হতে, শোনেন, আমি আপনি বাদে শতকরা 80 শতাংশ মানুষ ভোর বেলা ওঠেন, রাতের বেলা টাইম মত ঘুমুতে যান, বলবেন সকালে উঠতে পারি না, কারণ হল আপনি সোনামনির সাথে বহু রাত পর্যন্ত ফোনে ব্যস্ত ছিলেন! আপনি মুভি দেখা শুরুই করেছেন রাত বারোটায়! ব্যাপার হইল, আপনার ঘুম, আপনাকে ঘুমাতে হবে, অন্য কেউ সেটা ঘুমিয়ে দেবে না!
আপনাকে তিন বেলা ডিউ টাইমে "বাসায়" খেতে হবে, ফেসবুকের অদভূত কিছু প্রাণী ছাড়া দুনিয়ার অধিকাংশ মানুষ বাসায় নিয়মিত খায়, তরকারি পছন্দ হোক, বা না হোক! আপনি সপ্তাহে এক বেলা,আই রিপিট এক বেলা খেতে পারেন বাইরে, এর চাইতে বেশী আপনি বিনা প্রয়োজনে বাইরে খাচ্ছেন, এর মানে হল আপনার ফেসবুকে ছবি দিতে ভাল লাগে! মানুষ কে দেখাতে ভাল লাগে! যে বাপের পয়সায় আপনি সপ্তাহে তিন দিন এসিস্টেন্ট প্রেমিকা নিয়ে খাচ্ছেন, সেই বাপ বছরে একবারো সেই রেস্টুরেন্ট পাড়াচ্ছেন না!
বাপ-মায়ের কথা চলে আসল, আচ্ছা, আপনার কিংবা আপনাদের বেস্টি কয়জন? আপনাদের প্রচুর ফ্রেন্ড, লাইফে দুই একবার ফ্যাটাল বিপদে পড়ে দেইখেন, আপনার জন্য দাড়ায় আছে বাপ মা! তাদের কখনো সময় দিয়েছেন? বলতে পারবেন, তারা কি কি ওষুধপাতি খায়? তার দাম কেমন কিংবা তাদের শরীর কেমন আছে? জিজ্ঞেস করেছেন কখনো, কেমন আছ? কাছে যেয়ে বসেছেন? প্রায় প্রতি সপ্তাহে আমার বাপে আমাকে বাসা থেকে বের হয়ে যেতে বলেন, কেন জানেন? আমি ইচ্ছা করে তার সাথে দেশ-রাজনীতি-ইসলাম-বুশ-ট্রাম্প- বিয়ে শাদী নিয়ে আলাপ করি, আমরা দুজনেই প্রচন্ড বদমেজাজি, ঘাড় ত্যাড়া, তর্ক বিতর্কের এক পর্যায়ে আমাকে চিল্লায়ে বলবে বের হয়ে যা আমার বাসা থেকে..
এই বাপ-মা কিন্তু একটা সময় থাকবে না! এসিস্টেন্ট প্রেমিকার মাঝে তখন কেউ হয়ত বউ হয়ে থাকবে, বাবা মা থাকবে না! অনেকের গ্র্যান্ড প্যারেন্টস থাকে, তাদের সময় দেন, বুড়ো হলে মানুষ বড্ড একা হয়ে যায়, তাদের সেই "ভ্যাড়ভেড়ানি" শুনবেন! এক জীবন পার করে এসেছেন তারা, তাদের অভিজ্ঞতার মূল্য অনেক! সেদিন কুকুরে কামড় দেয়া এক পেশেন্ট আসছিল, আমার সিক্সটি ফাইভ প্লাস সেই স্যার বলতেছেন, জানো মুস্তাফিজ, আমারো বড় একটা কুকুর ছিল ছোটবেলায়, তাতে ঘোড়ায় চড়তাম!
যারা ম্যারিড, তারা বউকে সময় দিন! একি বিছানায় শুয়ে, দুইজনে দুইদিকে ফোন নিয়ে টেপা দূরত্ব বাড়াবে, ঝগড়া হবে প্রচুর, বেকার অবস্থায় প্রচুর ঝগড়া হয়, কিন্তু কোন ঝগড়া পরদিন পর্যন্ত দীর্ঘায়িত করবেন না, এতে দূরত্ব তৈরি হয়, থার্ড পার্টি স্পেস পায়!
এখন বউকে সময় দেয়া মানেই শপিং, বাইরে ঘুরতে যাওয়া নয়, বউকে আদর করুন, সকাল বিকাল দেশ স্বাধীন করুন! বউ এর সাথে রান্না করুন, রান্না শিখুন, যোগালীর কাজ করুন! এতে করে হৃদ্যতা বৃদ্ধি পাবে! কিচেনের সামনে ব্লু টুথ স্পীকার দিয়ে গান ছেড়ে কাজ শুরু করেন! এটা যে কি আনন্দের ব্যাপার হবে, কি যে ভাল লাগবে! পার্ফেক্ট কোয়ালিটি টাইমের এক্সাম্পল এটা! প্রথম প্রথম রান্না খারাপ হবে, পরে দেখবেন, কুকিং ইজ ইয়োর পেছন!
বই পড়ুন, বাংলা সাহিত্যের মাঝেই এত চমতকার বই আছে, পড়তে বসলে আপনি হারিয়ে যাবেন! পিডিএফ না, বই পড়তে হবে! জ্ঞান বাড়বে! কিছু বই আপনাকে জ্ঞান পাপী বানালেও, সত্য খোজার দায়িত্ব আপনার নিজের! মুভি দেখুন, যে কোন মুভি দেখার আগে আই এম ডিবিতে সে মুভির ব্যাপারে খোজ নিন, জিনিস টা কেমন! আমি লাস্ট দেখছি দ্য শ্যাডো অফ আইরিস, 2016, ফ্রেঞ্চ! এটা দিয়েই শুরু করেন! ক্রাইম ড্রামা মিস্ট্রি! আমার কাছে একটা সুন্দর মুভির মত বিনোদন আর কিছুতে নাই!
ধর্মে অনুরক্ত হন, নামাজ পড়েন, কোর আন শরীফ পড়েন, নাস্তিক হলে এপ্রিসিয়েটিভ মনোভাব গড়ে তুলেন, কেউ ভাল কাজ করলে তার প্রশংসা করেন, বাসার দেয়াল ঘড়িটা মোছেন, ফ্লোরটা ঝাড়ু-মপ দিয়ে কাজের লোকটারে ভয় দেখান, তোমাকে ছাড়াও আমার চলবে! ধুলো জমা পাঠ্য বই গুলো ঝেড়ে দেখুন, আপন হয় কিনা! শখ করে কেনা ঘড়িটা, ক্যামেরাটা বের করে পরিষ্কার করুন, যেন ফাংগাস না পড়ে! নিজের কাপড় নিজে ধোয়ার অভ্যাস করবেন, নিজের টয়লেট নিজে ক্লিন করবেন! আয়নায় প্রতিদিন নিজেকে দেখবেন, কি আমি কি হচ্ছি!
সোশ্যাল মিডিয়াতে সময় একটু কমিয়ে নিজেকে সময় দেন, আমি আসলে কি চাই! ফোকাসড টার্গেট নেন, প্রতিদিন নিজেকে একবার আমার মত মনে করায়ে দেন, নাহ মুস্তাফিজ, তোমাকে আরো অনেকদূর যেতে হবে, তোমার কারণে যেন পরিবার দিল খুলে প্রশান্তির হাসি হাসতে পারে, সেই কারণ তোমাকে জন্ম দিতে হবে!
প্রতিটা জিনিসের যত্ন নিতে নিতে আপনি দেখবেন আপনি নিজের প্রতি যত্নবান হয়ে উঠেছেন, আপনার নিয়মিত ঘুম হচ্ছে, বুকে ব্যাথার নামে গ্যাস্ট্রিক চলে যাচ্ছে। প্রতিদিন আপনি আগের চাইতে উদ্যমী হয়ে উঠছেন, অকস্মাৎ বিপদ সামাল দেয়া শিখেছেন!
স্ট্যাটাস বড় হয়ে যাচ্ছে, আমি বাসে করে কল্যাণপুর থেকে জুরাইন চলে আসলাম! এটাও একটা কাজ, এটাও একটা প্রোডাক্টিভ কাজ! আমি সময় টুকু কাজে লাগালাম, প্রতিদিনের এক ঘেয়ে রাস্তার দৃশ্য আমাকে বিরক্ত করল না, আমি অফিসে আসলাম, আপনারা পেলেন একটা জ্ঞানভরা বক্তিমা! এটা মোটিভেশনাল না, এটা হইল টাইম ইউটিলাইজেশন! এখানে যে কাজ গুলোর কথা বলা হইসে, একজন সাধারণ মানুষ এভাবে জীবন যাপন করে, দ্য নরমাল ডেলি লাইফ! নিজের অসংগতি গুলো নিজে আইডেন্টিফাই করে সলভ করুন! মানব জীবনে না পাওয়ার হতাশা থাকেই, কিন্তু জীবন আনন্দময় করতে খুব ছোট ছোট বিষয়, খুব ছোট ছোট সুখ জরুরী....
©মুস্তাফিজুর রহমান

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ