Ticker

5/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

Responsive Advertisement

‘হেমলক সোসাইটি’ সিনেমায় পরমব্রত একটা গল্প বলেছিল...

 ‘হেমলক সোসাইটি’ সিনেমায় পরমব্রত একটা গল্প বলেছিল। গোল্ডেন গেট ব্রিজের কাছে পাওয়া একটা সুইসাইড নোটের গল্প। যেখানে লেখা ছিল, আমি এই ব্রিজটা ধরে হেঁটে যাচ্ছি। কেউ যদি একবার আমার দিকে তাকিয়ে হাসে, আমি আর এই ব্রিজ থেকে ঝাঁপ দিবো না।



চিঠিটা সুন্দর, কিন্তু গল্পটা কুৎসিত।
লোকটি মরে গিয়েছিল।
.
আমাদের মধ্যে বিরাট কোনো গন্ডগোল ঘটে গিয়েছে। কোথাও কিছু একটা ঠিক নেই। গত দশ মাসে করোনায় মারা গিয়েছে পাঁচ হাজার দুই শত জন। আত্মহত্যা করেছে এগার হাজার। দুই হাজার চৌদ্দ সালে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট বলছে, আমাদের দেশে গড়ে প্রতিদিন মরছে প্রায় আটাশ জন। প্রতি ঘন্টায় এক জন। অর্থাৎ আমি যখন এই লেখাটি লিখছি, একজন মরে গিয়েছেন। বাকি সাতাশ জন ভাবছেন মরার কথা।
.
একটা জরিপ অনুযায়ী, এই সুইসাইডগুলির পেছনে দায়ী প্রথম পাঁচটা সমস্যার মধ্যে এক নাম্বার হচ্ছে, পারিবারিক সমস্যা। একচল্লিশ দশমিক দুই পার-সেন্ট। বাকি চারটে যথাক্রমে, পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া কিংবা এই বিষয়ক চাপ, বৈবাহিক সমস্যা, ভালোবাসায় ব্যর্থতা এবং বিবাহ বহির্ভূত গর্ভধারণ কিংবা যৌন সম্পর্ক। সবক'টিই এগার দশমিক আট পার-সেন্ট।
.
এই পরিসংখ্যানটা একটা সত্য চোখের ভেতর আঙুল ঢুকিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে দেখায়, যারা মরছে- অর্ধেকই পারিবারিক সমস্যা থেকে রেহাই পেতে মরছে। মুক্তি নিচ্ছে। কী এমন হয়েছে আমাদের পরিবারগুলোর! জন্মদাতা জন্মদাত্রীরা নিজেদের অজান্তেই মৃত্যুর দুয়ারে কেন পাঠাচ্ছে সন্তানদের?
যৌথ পরিবারে হয় ঝগড়া-ঝাঁটি, ঝামেলা। মিলেমিশে চলতে হয়। যৌথ পরিবারগুলোও ভেঙে যাচ্ছে। হাতে গোনা পরিবার দেখা যায় যৌথ এখন। যাচ্ছে, যাক। হয়তো বা সুখের জন্য আলাদা হচ্ছে। হোক। যে যার মতোন থাকুক। তবুও খুশি থাকুক। তারপরও বেঁচে থাকার জন্য ‘পরিবার’ বৃহৎ সমস্যা কী করে হয়!
পিতা/মাতাকে দায় তো নিতে হবে। কিছুটা দায় কি সন্তানেরও নয়?
.
‘ডিয়ার জিন্দেগী’ সিনেমায় আলিয়াকে শাহরুখ খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা উপদেশ দিয়েছিল। বাবা মাকে আর দশটা মানুষ হিসেবে দেখতে শেখো। ওরা দেবতা/দেবী নয়। ওদেরও ভুল হয়। এমন না যে ওদের ভুলগুলোতে তুমি কষ্ট পাবে না, পাও। ওদের ভুলগুলো তোমায় কাঁদাবে না কেন? কাঁদো। ওদের ভুলগুলো তোমায় রাগাবে। তো রাগো। এমন না যে, ভুলগুলো ভুলে ওদের ক্ষমা করে দাও। উহু। তোমার ইচ্ছে। প্রয়োজন হলে ওদের ভুলগুলোর জন্য ওদের ভুলেও ক্ষমা কোরো না। শুধু যা করবে, ওদের আর দশটা সাধারণ মানুষ হিসেবেই দেখে এবং ঐ জায়গায় রেখে করবে।
.
এই চমৎকার কথাগুলির ঠিক উল্টোটাই আমরা করি।
পিতাকে দেবতা, মাতাকে দেবীর জায়গায় বসাই। ওরা কখনও ভুল করেন না। ওরা কখনও কষ্ট দেন না। ওদের ভুলগুলো উগরে না ফেলে প্রসাদের মতোন ‘যা দেবেন, সন্তানের ভালোর জন্যই দেবেন’ ভেবে গলাধঃকরণ করি। ওদের দেওয়া ‘কষ্টগুলো’ মুড়ি মুড়কির মতোন খাই। গলায় আটকায়। কষ্ট পাই। এইটুকুন প্রসাদে কষ্ট তো হয়ই ভেবে কষ্ট চাপি। কান্না পায়। দেবতা/দেবীর ভুল হতেই পারে না, ভুলটা হয়ত আমার ভেবে কান্না আটকাই।
আমি অকৃতকার্য, আমি অযোগ্য। আমি অনর্থক। আমি অপদার্থ। রাগ ওঠে প্রচুর। দেবতা/দেবীর উপর রাগ করা উচিৎ নয়, মানসিক যাঁতাকলে পিষ্ঠ হয়ে উপরে নিক্ষেপ করা থুথুর মতোন রাগটুকুনও থুবড়ে পড়ে নিজের উপর শেষে। বন্দি করি নিজেদের একটা সময়। আর একদিন দড়ি হাতে ছুটি সিলিং-এ।
পিতা মাতা হয়ে ওঠেন গল্পের ঐ বিষন্ন সন্ধ্যের গোল্ডেন গেট ব্রিজের অন্যমনস্ক পথচারী। কাঁধে চাপ আর মাথাভর্তি ভয়াবহ চিন্তা নিয়ে ঘুরে বেড়ায় সন্তান, পাশ কেটে হেঁটে যায়। পিতা হাত ধরলেই থেমে যেত হয়তো, মা তাকিয়ে একটু হেসে দিলেই বেঁচে যেত আদরের ধন।
.
ওহে পিতা, মাতা...
কথা বলুন দয়া করে। আপনাদের প্রসাদ সমান সিদ্ধান্তগুলো ঠেসে সন্তানের মুখে ঢুকিয়ে দেওয়ার আগে সন্তানের জায়গায় দাঁড়িয়ে অন্ততপক্ষে দশ বার যাচাই বাছাই করুন। ওরা কাঁদছে চুপিচুপি হয়তো। ওদের জড়িয়ে ধরুন। কথা শুনুন। কথা বলুন।
©Shakhawat Hossen

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ