আমার কাছে সবচেয়ে কঠিনতম অপারেশন হল...কারো হাত বা পা কেটে ফেলা...
হার্টের কঠিনতম অপারেশনে সার্জিক্যাল টীমে থেকেছি...অপারেশন টেবিলেই কতজনকে মারা যেতে দেখেছি...মৃত মানুষ কেটেছি...লাশের গায়ে সেলাইও দিয়েছি...!
কিন্তু....
সিদ্ধান্ত যখন হয় একজনকে বাঁচাতে তার হাত বা পা কেটে ফেলতে হবে...তখন সত্যিই কষ্ট লাগে...
অপারেশন শেষে রোগী বা রোগীর লোকের দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে বলতে পারিনা...অপারেশন সাকসেসফুল হয়েছে...বললেও রোগী বা রোগীর লোকেরা ফ্যালফ্যাল করে মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে...অশ্রু ঝরিয়ে কৃতজ্ঞতা জানায়...কারণ এ অপারেশন সাকসেসফুল মানেই...দেহ থেকে তার পা টা বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে..এখন থেকে চির পঙ্গু সে...
তেমনই একজন আজকের রাশিদা...বয়স ২৬.. একমাত্র মেয়ের বয়স ৫ বছর! হার্টে অজানা কারণে রক্ত জমাট বেধেছিল...ছুটে গিয়ে সে রক্তের দলা পায়ে যায়...ফলাফল পায়ের রক্তনালী বন্ধ...পায়ে পালস নেই...পায়ে তীব্র ব্যথা...একসময় পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া!
এখানে সেখানে ব্যথানাশক ঔষধ ভক্ষণ... কত শত পরীক্ষা...অবশেষে প্রায় ১০ দিন পর ভাসকুলার সার্জন...!
অথচ এমন ঘটনায় হাতে সময় থাকে মাত্র ৬ ঘণ্টা...যাকে গোল্ডেন আওয়ার বলে...কোথায় ৬ ঘণ্টা আর কোথায় ১০ দিন!!! পা টাই হারাতে হল রাশিদাকে! কারণ পায়ের চেয়ে জীবন বড়!
সত্যিই বড় কষ্ট হচ্ছে...আলাউদ্দিনের দৈত্যটা পেলে নিশ্চয়ই একটা স্বপ্ন পুরণ করতাম...দেশের সব মানুষের কাছে ওকে দিয়ে নিচের ম্যাসেজ গুলো পাঠাতাম:
১. কারো পায়ে বা হাতে হটাত তীব্র ব্যথা হলে দ্রুত চিকিৎসককে দেখিয়ে চেক করে নিন...হাতের কিংবা পায়ের পালস ঠিক আছে কিনা?
২. পায়ে বা হাতে হটাত ব্যথা ও ঠান্ডা হয়ে যাওয়া রক্তনালীর বন্ধ হওয়ার কারণে হয়ে থাকে!
৩. যাদের হার্টবিট অনিয়মিত, যাদের রক্তজমাট বাধার প্রবণতা আছে, যাদেরর হার্টের ভালভে সমস্যা আছে তাদের এ ধরণের সমস্যা বেশি হয়ে থাকে!!
৪. পায়ের রক্তনালী বন্ধ হয়ে গেলে বা কেটে গেলে হাতে সময় থাকে মাত্র ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা!
হয়ত এই জনমে পাব না সে দৈত্যের দেখা...
বন্ধুরা তাই ভরসার জায়গা...অন্তত একজনকে মানুষকে এই তথ্যটি জানিয়ে দিন...কে জানে আপনার অসিলায় হয়ত বেচে যাবে আরেক রাশিদা!
.
©ডাঃ সাকলায়েন রাসেল
0 মন্তব্যসমূহ