Ticker

5/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

Responsive Advertisement

বাবা তার সন্তানকে ভদ্রতার শিক্ষা দিচ্ছেন এভাবে...

আমি কোথায় যেনো দেখেছিলাম, এক বাবা তার সন্তানকে ভদ্রতার শিক্ষা দিচ্ছে। বাচ্চার বয়স বেশি না, তিন চার বছর হবে। সে একটু পর পর তার বাবার হাতে কামড় দিচ্ছে। শক্ত করে আঙুল চেপে ধরছে। বারবার হাত টেনে ধরে খামচাচ্ছে। ছেলের এমন কর্মকাণ্ডে বাবা বিরক্ত হলেও তার আচার আচরণে সেটা বোঝা গেলো না। সে আলতো করে বাচ্চার হাত ধরে রেখেছে। মাঝে মাঝে হালকা করে হাত ডলে দিচ্ছে। নমনীয় হতে শিখাচ্ছে...



ব্যাপারটা ভাল্লাগলো। শৈশবের স্মৃতি থেকে যতটুকু মনে পড়ে, আমার বাবা মাও এমনই ছিলো। সেসময়টাতে আমার চারপাশের প্রতিটা বাবা-মা'ই এমন ছিলো। তারা উঠতে বসতে সন্তানদের ভদ্র হতে শেখাতো। যেখানে সেখানে চুইংগাম ফেলা যাবেনা, খাবার টেবিলে বসে পা নাড়ানো যাবেনা, ফুড টেবিল ইটিকেটস মেন্টেইন করো, একে সালাম দাও ওকে সালাম দাও, অপরিচিতজনদের আপনি করে বলো, কাজের বুয়াকে খালা বলে ডাকো ইত্যাদি ইত্যাদি...
এগুলো কিন্তু আমরা মায়ের পেট থেকে শিখে আসিনি। আমাদের শেখানো হয়েছে। কখনো মুখে বলে, কখনো চলাফেরার মাধ্যমে...
প্রতিবেশী আরিফের বাবাকে দেখতাম রিকশাওয়ালাকে ধমকাতো। এই তুই যাবিনা কেনো? ভাড়া বেশি চাইলি কেনো? থাপড়ায়া কানসা ফাটায় ফেলামু ইত্যাদি ইত্যাদি। বাবার দেখাদেখি আরিফও ওমনই হইসে। ওইসময় ক্যাপের বারান্দা পেছনের দিকে ঘুরিয়ে পরার একটা ট্রেন্ড চালু হলো। আরিফ ১৯৯৮ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত টানা দুইটা বছর ক্যাপের বারান্দা পেছনে ঘুরিয়ে পরেছে। আর আমার বাবা ছিলো এরকম, একটা ক্যাপ পড়লে সেটাকে ডানে বামে বা পেছনে ঘুরানো যাবেনা। ক্যাপের বারান্দা অবশ্যই সামনের দিকে থাকতে হবে। নাহলে তোর ক্যাপ পড়ার দরকার নাই। বেল মাথা নিয়েই বাইরে যা...
একটা সময় এভাবেই ভদ্রতা শেখানো হত।
এখনকার দিন নিয়ে কিছু বলতে চাচ্ছিলাম। কি বলা উচিত বুঝতেসিনা। ২০১৫ সালের পর থেকে, স্পেসিফিকলি বলতে গেলে গত দুই তিন বছর যাবৎ শুধুমাত্র ফেসবুকেই আমি যে পরিমাণ বেয়াদব দেখলাম, তাতে মনে হচ্ছে, বাবা মায়েরা সন্তানদের ভদ্র হবার শিক্ষা দেয়া ছেড়ে দিয়েছে। কারণ বাজারে একটা কথা ঘুরে বেড়াচ্ছে, "ভদ্রতার নাকি ভাত নেই। ভালো মানুষদের মাথায় সবাই কাঁঠাল ভেঙে খায়..."
আর এ কারণেই বোধহয় বাবা মায়েরা তাদের সন্তানদের ভদ্রতাজ্ঞান দেয়া ছেড়ে দিয়েছে। অথবা বাবা মায়ের দোষ নেই। বাচ্চারাই যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে বা খাপ খাইয়ে নিতে অভদ্র, বেয়াড়া হয়ে গেছে...
অথচ আমরা কত স্মার্ট একটা জাতি ছিলাম, তা আশির দশকের চিত্রগুলোর দিকে তাকালে বুঝা যায়। তখনকার কয়টা গান শুনলে বুঝা যায়, আমরা কি জাতি আজ কি হয়ে গেছি...
এমনকি গত কবছর আগেও মানুষ মানুষকে বুদ্ধিদীপ্ত উত্তর দিয়ে তর্কে পরাস্ত করতে পারত। এখন মানুষ গালাগালির দারস্থ হয়।
আর ইদানিং তো এমন কিছু মানুষের দেখা পাওয়া যাচ্ছে, যারা সম্মানিত ব্যক্তিদেরও কিছু মনেই করছেনা। আমরা সম্মান পাবো তো দুরের কথা। এদের কাছে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরই সম্মান পায় না। হুমায়ুন আহমেদ, জীবনানন্দ দাশেরা মারা গেছেন ভালো হয়েছে। এই অভদ্র প্রজন্মের মাঝে সুস্থ থাকা একেবারেই সম্ভব না...
আজকের ছোট্ট একটা ঘটনা বলি,
অফিসের এক বড়ভাই ফেসবুকে তার বউ নিয়ে সৈকতে নামার ছবি পোস্ট করেছে। সেখানে দেখলাম, তার পরিচিত কয়েকটা বাচ্চা বাচ্চা ছেলে নানানভাবে ইঙ্গিতমূলক কমেন্ট করে বিকৃত মজা নেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। বেচারা নিজেও বুঝতেসে, আমিও বুঝতেসি। সবাই বুঝতেসে। কিন্তু কিছু বলার নাই। হয় ইগনোর করো। নাহলে কমেন্ট ডিলেট। এছাড়া আর কিইবা করার আছে? সব তো নিজেরই মানুষ...
... এগুলা কোনো কথা?
এই জেনারেশন এত নিকৃষ্ট কিভাবে হলো? বাবা মা যদি সন্তান পালতেই না পারে, তাহলে জন্ম দিয়ে ছেড়ে দিয়েছে কেনো?
আমার মনে হয়, এসব ট্রল/রোস্টিং বন্ধ করে দেয়া উচিত। একটা সময় পর্যন্ত এসব ঠিক ছিলো। আমরাও এসব করে এসেছি। কিন্তু এখন আর ঠিক নেই। মানুষ এখন মানুষকে সম্মান করতে ভুলে যাচ্ছে। মানুষ দিন দিন আক্রমণাত্মক হচ্ছে। এটা আর যাই হোক, ভালো কিছু হতে পারেনা...
©কাজী নিপু

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ