Ticker

5/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

Responsive Advertisement

আমাদের শায়লা আপা...

পাশের বাসার শায়লা আপার নতুন একটা বিয়ের প্রস্তাব এসেছে। শায়লা আপা সুন্দরী এবং মেধাবী, সুতরাং, এ বাড়ীতে ঘটকের আনাগোনা নতুন কিছু না। তবে এই ঘটকের সাথে আজকে ছেলের মাও এসেছে। ছেলে এয়ার ফোর্সের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা, সুদর্শন। কোনো এক জন্মদিনের অনুষ্ঠানে শায়লা আপাকে দেখে ছেলের মা এতদূর এসেছেন। যতক্ষণ পর্যন্ত না জানা গিয়েছিল ছেলের আগের স্ত্রী থ্যালাসেমিয়ার কমপ্লিকেশনে মারা গিয়েছে, শুধু তাই না ছেলের একটা পাঁচ বছরের মেয়ে আছে ততক্ষণ পর্যন্ত সব কিছু ঠিক ঠাক ছিল।

রাগে দুঃখে খালাম্মা এবার স্তব্ধ।

একটা অবিবাহিত মেয়ের জন্য কোন হিসেবে এক বাচ্চার বাবার প্রস্তাব ঘটক এনেছিলেন, এটা উনি ঘটককে বাসার ভেতরে ডেকে জিগেস করেছিলেন।

থতমত খেয়ে ঘটক বলেছিল - "আপা আমার ভুল হয়ে গেছে!"

ছেলের মার সামনে ই আর খালাম্মা যান নি। ওনারা নীরবেই ড্রয়িং রুম থেকে বিদায় নিয়েছিলেন।

শায়লা আপা অবশ্য কিছুটা গাই গুই করে বলেছিলেন- "আম্মা! বউ মারা গেছে, এতে ওনার কি দোষ?"

প্রতিউত্তরে খালাম্মা বলেছিলেন- "তোর লজ্জা বলে কিছু নাই? বড় মেয়ের বিয়ে দেবো, এক বাচ্চার বাবার সাথে? সমাজে মুখ দেখাবো কি ভাবে?"

সেই বয়সে আমার জন্য এয়ারফোর্স কিংবা থ্যালাসেমিয়া শব্দ গুলো ভারিক্কি ছিল বৈকি। তবুও কেনো জানি মনে আছে আজ অব্দি।

এরপরের ঘটনা খুব বেশী নাটকীয় না। আপার বিয়ে হলে গেল ইউনিভার্সিটির একজন লেকচারের সাথে। বিয়ের পর চাকরি পড়াশুনা তো দূরে থাক, শুনেছি আপা ভাতের সাথে সকাল বিকাল তিন বেলা মাইর খেতো। প্যারাময় জীবনের অপর নাম মেডিকেল। কয়েকবার বাবার বাড়িতে গিয়ে উঠেছিল মেয়েটা। তখন অতি জ্ঞানী মামী চাচীরা বুঝিয়ে বলেছে- "তোমাকে আরো শক্ত হতে হবে। স্বামী স্ত্রীর মধ্যে এমন ঝামেলা হতেই পারে। আমরা কি ঘর সংসার করিনা?"

শুনেছি, নাঈম ভাইয়ের অন্য একজন মেয়ের সাথে সম্পর্ক ছিল। শায়লা আপার সব কিছুতেই ওনার চরম বিরক্তি।

শক্ত হতে হতে শায়লা আপা মারা যায় বিয়ের আট বছরের মাথায়। কেনো মারা যায় জানি না। কেউ বলে আত্মহত্যা আবার কেউ বলে ঘুমের মধ্যে স্ট্রোক। ওনার পরিবার মামলা মোকাদ্দমা বা পোস্টমর্টেম করতে চায় নি। কারন ঘরে তখন আরো দু'জন অবিবাহিত মেয়ে।

তবে অবশ্য একদিক থেকে ভাল ই হয়েছে, আপা ডিভোর্সী হয়ে বাড়ি ফিরলে শর্মী আর নায়লা আপার ভাল বিয়ে হতো না।

আমাদের সমাজে বেঁচে থাকার চেয়ে বিয়ে টিকিয়ে রাখাটাই বেশী জরুরী। তাছাড়া এই সমাজে একজন ডিভোর্সী মেয়ের চেয়ে অবশ্য ই একজন মৃত মেয়ে পরিবারের জন্য বেশী সম্মানজনক।

অথচ এখন আমি যে দেশে থাকি সেদেশে অনায়াসে একজন অবিবাহিত ছেলে তিন বাচ্চার মাকে বিয়ে করে সুখে শান্তিতে জীবন পার করে দিচ্ছে। নির্দ্বিধায় একজন মানুষ তারচেয়ে বয়সে বড় কিংবা ছোট জীবন সংগীর সাথে দিব্যি সুখে শান্তিতে ঘর করছে। অসংখ্য মানুষ এখানে স্বেচ্ছায় সিংগেল লাইফ লিড করছে। এখানে পাশের বাসার আন্টির কিছু বলার নেই। বলার থাকলেও কারো সেটা শোনার টাইম নেই।



Actually, what the hell you will do with someone's look, money, age, virginity or past, if he or she is not a good human being?? Or if you are not happy??



©ডা. মোশাররাত জাহান কনা
Resident Physician at Australia

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ