মানুষটার নাম ইলিয়াস কাঞ্চন মোটামোটি সবাইর চেনার কথা তাকে। একসময় বাংলা ছবি দাপিয়ে বেড়ানো নায়ক। "১৯৭৭" সালে সুভাষ দত্তের "বসুন্ধরা" ছবির মাধ্যমে নায়িকা ববিতার সাথে তার চলচ্চিত্রে অভিষেক হয়। ১৯৮৯ সালে মুক্তি পাওয়া তার ইতিহাস সৃস্টিকারী ছবি "বেদের মেয়ে জোছনা" বাংলা ছবির ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যবসাসফল ছবি এখন পর্যন্ত যেই রেকর্ড আজ পর্যন্ত কেউ ভাঙ্গতে পারেনি। নিকট ভবিষ্যতেও ভাঙ্গার কোন সম্ভাবনা নেই। ইয়াং জেনারেশনের অনেকের কাছে এইসব ছবি ক্ষ্যাত লাগলেও এইটাই বাস্তব। ১৯৮৫-১৯৯৫ ছিলো তার ক্যারিয়ারের স্বর্ণযুগ যা আমাদের অনেকের জন্মের অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। রাজ্জাক,ফারুক,জসিম থেকে শুরু করে মান্না,রিয়াজ,শাকিব, ফেরদৌস মোটামোটি সবাইর সাথে কমবেশী কাজ করেছেন তিনি। তার ক্যারিয়ারের চলচ্চিত্রের সংখ্যা ৩০০ টিরও বেশী। পরিণিতা,শাস্তিসহ আরো অনেক ছবির জন্য বহুবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ নানা পুরস্কারে ভূষিত হন গুণী এই অভিনেতা। ১৯৮৩ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন স্ত্রী জাহানারা কাঞ্চনের সাথে।

কিন্ত তার জীবনের মোড় ঘুড়ে যায় ১৯৯৩ সালের ২২ অক্টোবর একটা সড়ক দুর্ঘটনার মাধ্যমে। তার স্ত্রী তার একটি ছবির শ্যুটিং দেখতে যাওয়ার সময় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। ১৯৯৩ সালের ডিসেম্বরের ১ তারিখে তিনি খুব ছোট পরিসরে "নিরাপদ সড়ক চাই" আন্দোলনের যাত্রা শুরু করেন। যা আজ বিশাল আকারে রুপ নিয়েছে আস্তে আস্তে। তার সামনে পড়ে ছিলো বিশাল ক্যারিয়ারের হাতছানি। সে ক্যারিয়ার নিয়ে পড়ে থাকলে কমপক্ষে আরো ১০-১৫ বছর সে চলচ্চিত্রে শীর্ষঅবস্থান ধরে রাখতে পারতো। ছাড়িয়ে যেতে পারতো তার সমসাময়িক সব নায়ককে। কিন্ত সেটা না করে তিনি তার জীবন উৎসর্গ করেছিলো নিরাপদ সড়কের জন্য। দীর্ঘ ২৫ বছর একাই দিনের পর দিন রাজপথে লড়ে গেছে সাথে কাউকে পায়নি সে। নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের সামনে বাস মালিক-শ্রমিকদের কাছেও তাকে অপমানিত হতে হয়েছিল খুব বাজেভাবে যা ভাষায় প্রকাশের অযোগ্য তখনও তার পাশে কেউ ছিলোনা। হয়ত,কাউকে পাশে পেলে হয়তো কমে যেতো রাজ পথের অনাকাঙ্ক্ষিত দূর্ঘটনা । হয়তোবা, যারা মারা গেলেও তাদের ভাগ্যটাও এতোটা খারাপ হতোনা। পরিবহণখাতের এইসব সমস্যার আরো আগেই সমাধান হতো।কিন্ত দুর্ভাগ্যবশতভাবে আমাদের তখনো হুশ ছিলোনা তাকে অনেকে পাগল ভাবতো। কিন্ত এখন অনেকদিন পর তার এই আন্দোলনের গুরত্ব বুঝতে পারছে বিবেকবান মানুষ। এই ২৫ বছরতো মানুষটা একাই নিরাপদ সড়কের জন্য আন্দোলন করে ক্লান্তিহীনভাবে । নতুন যে আইন হয়েছে সে আইনের বিরুদ্ধে নেমেছে একসময়ের মন্ত্রী ও পরিবহন শ্রমিক নেতা শাজাহান খান।
বার বার নানা ভাষায় আক্রমন করছে ইলিয়াস কাঞ্চনকে।
তাদের সব চেষ্টা যেন শুধু ইলিয়াস কাঞ্চনকে থামানো।
একসময় হয়ত বাংলাদেশ নিরাপদ সড়ক পাবে। কিন্ত ইলিয়াস কাঞ্চনদের অবদান অনেক মানুষ ভুলে যাবে। যেই লোক নিজের ক্যারিয়ার বিসর্জন দিয়ে ২৫ বছর রাজপথে লোকটা একাই আপনার,আমার,আমাদের পরিবারের সুরক্ষার জন্য উৎসর্গ করলো সেই লোকটাকে যখন তখন অপমানজনক কথা বলে দূর্ণীতিবাজ শাজাহান খান গং। নিজের আপনজন হারানোর কস্ট পাওয়ার পরেই আর যাতে কেউ কস্ট না পায়,কারো বুক যাতে খালি না হয় সেইটা বাস্তবায়নের জন্যই সে রাস্তায় নেমেছিলো সৎ একটা উদ্দেশ্য নিয়ে,নিজের ক্যারিয়ার বিসর্জন দিয়ে।
পর্দার পিছনের এইসব আনসাং হিরোরা হয়তো একসময় থাকবেনা কিন্ত তাদের এই লো কাজগুলা বেচে থাকবে যুগের পর যুগ মানুষের হৃদয়ে। ভালোবাসা আর ধন্যবাদ এই সত্যিকারের হিরোর প্রতি যে বাংলাদেশের মানুষকে নিরাপদ সড়কের স্বপ্ন দেখতে শিখেয়েছিলো। আজকে তার ২৫ বছর আগে শুরু করা আন্দোলনটাই পুরো দেশে মাঝে মধ্যেই দাবানলের মত গত কয়েকবছরে ছড়িয়ে পড়েছে। তখন তিনি একা ছিলেন আজ তার পাশে আছে কোটি মানুষ। এইসব দেখে হয়ত কাঞ্চন সাহবের চোখের কোনে পানি এসে বুক গর্বে ভরে উঠে কারণ আজ তার স্বপ্নের সাথে আছে অনেক মানুষ। এতো মানুষের ভালোবাসা আর সাপোর্টের কারনে এসব ধান্দাবাজ শাজাহান খানদের কথায় তার হয়তো এখন গায়ে লাগেনা।
হিরোতো অনেকেই হয় কিন্ত পর্দার পাশাপাশি রিয়াল লাইফ হিরো বাংলাদেশে একজনই ছিলো। তার নামটা মনে রাখবেন "ইলিয়াস কাঞ্চন"
তথ্য ও লেখাঃ সংগৃহীত ও পরিমার্জিত
0 মন্তব্যসমূহ